ভারত-শাসিত কাশ্মীরে থানায় ঢুকে সেনা সদস্যরা পুলিশকে মারধর করেছে কেন? - BBC News বাংলা (2024)

ভারত-শাসিত কাশ্মীরে থানায় ঢুকে সেনা সদস্যরা পুলিশকে মারধর করেছে কেন? - BBC News বাংলা (1)

ছবির উৎস, Getty Images

Article information
  • Author, রিয়াজ মাসরূর
  • Role, বিবিসি উর্দু, শ্রীনগর

ভারত-শাসিত কাশ্মীরে স্থানীয় পুলিশকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা মারধর করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

কুপওয়ারা থানায় সেনাবাহিনীর ১৩ জন সদস্যকে নিয়ে তিনজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল জবরদস্তি ঢুকে পড়ার চেষ্টা করছিলেন।

থানায় কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তারা আপত্তি জানালে সেনা সদস্যরা তাদের ওপর চড়াও হয়। তখন থানার ওসি-সহ বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন।

থানায় ঢুকে খুনের চেষ্টা, ডাকাতি, উর্দি-ধারী পুলিশ অফিসারদের মারধর-সহ একাধিক মামলা রুজু করেছে পুলিশ।

এর আগে স্থানীয় পুলিশ এক সেনা কর্মকর্তার বাড়িতে অভিযান চালায়। সেই ঘটনারই কী বদলা নিতে সেনা সদস্যরা থানায় জোর করে ঢুকে পড়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন?

কুপওয়ারা নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে একটি জেলা এবং এই শহরের আশেপাশে অনেক সেনা ক্যাম্প রয়েছে।

পুলিশ সূত্রে খবর, গত বুধবার সন্ধ্যায় সেনা সদস্যরা যখন সহিংসতা চালাচ্ছিলেন, তখনই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয় এবং তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান।

থানা থেকে সেনা সদস্যরা চলে যাওয়ার আগে ওসির ফোন কেড়ে নেয় এবং থানার এক কর্মচারিকে অপহরণ করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। পরে অবশ্য ওই কর্মচারীকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

কাশ্মীর উপত্যকায় মোতায়েন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১৬ কোর ওই সংঘর্ষের ব্যাপারে যে এফআইআর দায়ের হয়েছে, সে ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেনি, তবে ওই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পরে সেনাবাহিনী জানিয়েছে "সংঘর্ষের খবরটি ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা।“

বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন
  • কীভাবে ১৯৪৭ সালে দু'ভাগ হয়েছিল কাশ্মীর

  • ভূস্বর্গ কাশ্মীরে এক টুকরো ‘বাংলাদেশে’র সন্ধানে

  • ছয় টাকার ডিম নিলামে তুলে সোয়া দুই লাখ সংগ্রহ মসজিদ কমিটির

ভারত-শাসিত কাশ্মীরে থানায় ঢুকে সেনা সদস্যরা পুলিশকে মারধর করেছে কেন? - BBC News বাংলা (2)

ভারতীয় সেনাবাহিনী এটাও বলেছে যে সেনাবাহিনী ও পুলিশের মধ্যে কাজের ব্যাপারে কিছু বিরোধ দেখা দিয়েছিল, যা বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে সমাধান করা হয়েছে।

আগেও সংঘর্ষ হয়েছে

এই ধরনের ঘটনা এই প্রথম নয়। গত ৩৫ বছরে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে এবং প্রতিবারই তদন্ত ঘোষণা করা হয় কিন্তু দোষীরা শাস্তি পায় না।

শ্রীনগরের বাসিন্দা আলি মুহম্মদ ওয়াতালি ১৯৮০ সালে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের সিনিয়র সুপারিন্টেডেন্ট অফ পুলিশ বা এসএসপি ছিলেন। সে বছরের ২৬শে জুলাই শ্রীনগরের লাল চকে তার ওপর লোহার রড় ও বন্দুকের বাট নিয়ে হামলা চালায় সেনা সদস্যরা।

আলি মুহাম্মদ ওয়াতালি বিবিসিকে বলছিলেন, “সেনাবাহিনীর একটি গাড়ির সঙ্গে একটি অটোরিকশার সংঘর্ষ হলে সেনাবাহিনীর চালক পালিয়ে যায়।

“এরপরে অটো-চালকের মুখ বন্ধ রাখতে হট্টগোল শুরু করে সেনা সদস্যরা। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। রাস্তার মাঝখানে সেনাবাহিনীর একটি ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল, তাতে কোনও চালক ছিল না। আমি পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছিলাম। এরই মধ্যে সাইকেল আরোহী এক শিশুকে নির্দয়ভাবে পেটাতে শুরু করে সেনা সদস্যরা।

“আমি বাধা দিলে সেনা সদস্যরা লোহার রড ও বন্দুক দিয়ে আমার মাথায় ও মুখে আঘাত করে। আমি সেখানে দীর্ঘক্ষণ মৃতপ্রায় অবস্থায় পড়ে ছিলাম,” বলছিলেন আলি মুহাম্মদ ওয়াতালি।

তার মুখের হাড় এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে তিনি এখনো চিকিৎসা করাচ্ছেন।

তিনি আরও বলছিলেন যে শ্রীনগরের বাণিজ্যিক কেন্দ্র লাল চকে সেদিন যত গাড়ি পার্ক করা ছিল, সবগুলিতে সেনা সদস্যরা ভাঙচুর চালায়, নির্বিচারে গুলি চালায় তারা। দুজন মারা গিয়েছিলেন সেদিন।

ঘটনার তদন্তের ঘোষণা দিয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শেখ মুহম্মদ আবদুল্লা। ওই তদন্ত কমিটিতে সেনাবাহিনীর কোর কমান্ডার, হাইকোর্টের বিচারপতি ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিলেন।

আলি মুহাম্মদ ওয়াতালি বলছিলেন, “পরে সেনাবাহিনী একটি বিবৃতি দিয়ে বলে যে আমি গণপিটুনিতে আহত হয়েছি। বিষয়টি সেখানেই থেমে যায়।“

Skip YouTube post

Google YouTube কনটেন্টের জন্য কি অনুমতি দেবেন?

এই নিবন্ধে Google YouTubeএর কনটেন্ট রয়েছে। কোন কিছু লোড করার আগে আমরা আপনার অনুমতি চাইছি, কারণ তারা হয়ত কুকি এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকতে পারে। আপনি সম্মতি দেবার আগে হয়ত Google YouTube কুকি সম্পর্কিত নীতি এবং ব্যক্তিগত বিষয়ক নীতি প়ড়ে নিতে চাইতে পারেন। এই কনটেন্ট দেখতে হলে 'সম্মতি দিচ্ছি এবং এগোন' বেছে নিন।

সতর্কবাণী: বিবিসির নয় এমন ওয়েবসাইটের কনটেন্টের জন্য বিবিসি দায়ী না YouTube কনটেন্টে বিজ্ঞাপন থাকতে পারে

End of YouTube post

ভারত শাসিত কাশ্মীরে ১৯৮০ সালে সশস্ত্র আন্দোলন শুরু হয় এবং এর পরেই সেনাবাহিনী শ্রীনগরের হজরতবাল এলাকায় এক যুবককে মেরে ফেল এরকম দাবি করে যে তারা একজন সশস্ত্র চরমপন্থিকে হত্যা করেছে। কিন্তু রিয়াজ রসুল নামের ওই যুবক আসলে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের কনস্টেবল ছিলেন।

ওই মৃত্যুর ফলে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশে বিদ্রোহ হয়ে যায়। উর্দি-ধারী পুলিশ অফিসাররা তাদের অস্ত্র শূন্যে তুলে ধরে শ্রীনগরে একটি মিছিল বের করেছিলেন। পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে ওই মিছিলটির ওপরে নজর রাখা হচ্ছিল।

বেশ কয়েকদিন ধরে উত্তেজনা চলতে থাকে এবং অবশেষে সেনাবাহিনী পুলিশ কন্ট্রোল রুমে প্রবেশ করে বিক্ষুব্ধ পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়। পরে বেশ কয়েক ডজন পুলিশ কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

পুলিশ সূত্রে খবর, বেশ কয়েক বছর আগে কাশ্মীরের কোলগাম ও গান্দরবাল জেলাতেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল।

অমরনাথ যাত্রা চলাকালীন ২০০২ সালে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা সম্পর্কে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলছিলেন, "সেনাবাহিনীর এক মেজর বেশ কয়েকজন সেনা অফিসারকে নিয়ে জোর করে যাত্রীদের শিবিরে অস্ত্র নিয়ে ঢুকতে চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু শিবিরে অস্ত্র নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পুলিশ বলেছিল যে সেনা সদস্যদের অস্ত্রগুলি বাইরে জমা রাখতে হবে। সে কথা না শুনে সেনা সদস্যরা পুলিশ কর্মীদের মারধর করে। অনেক পুলিশ অফিসার মার খেয়ে বেশ কয়েক সপ্তাহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

ভারত-শাসিত কাশ্মীরে থানায় ঢুকে সেনা সদস্যরা পুলিশকে মারধর করেছে কেন? - BBC News বাংলা (3)

ছবির উৎস, Getty Images

সেনা ও পুলিশের মধ্যে কেন সংঘর্ষ হয়?

সামরিক বাহিনী, পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনীগুলির বাড়াবাড়ি নিয়ে অনেক বছর ধরে মামলা লড়ছেন এমন একজন সিনিয়র আইনজীবী বিবিসিকে বলেছেন যে সেনাবাহিনীকে সীমাহীন ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে যে আইনে, সেখানেই লুকিয়ে আছে পুলিশ আর সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষের মূল কারণ।

তিনি বলেন, “কাশ্মীরে আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট (আফস্পা) কার্যকর রয়েছে। এখানে নিযুক্ত প্রত্যেকটি সৈনিক জানে যে কেউ তার ক্ষতি করতে পারবে না। এ কারণেই কোনও কোনও সময়ে নিজেদের স্বার্থে তারা সাধারণ মানুষ বা পুলিশকেও টার্গেট করে। কারণ তারা জানে যে কোনও আদালত তাদের শাস্তি দিতে পারবে না।“

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা বলছিলেন, "এখানকার পুলিশ কর্মকর্তারা এখনও নিজেদের সরকারি কর্মচারী মনে করেন। তারা আইন সম্পর্কে সচেতন। ইউনিফর্ম পরা একজন ব্যক্তির গায়ে হাত তোলার অর্থ কী, সেটাও তারা জানেন। কিন্তু সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রায়ই দেখা গেছে যে তারা আইন সম্পর্কে সচেতন নন। আবার কোনও পরিস্থিতিতে এটাও দেখা যায় যে তাদের মধ্যে নিজেকে সেরা মনে করার একটা মানসিকতা রয়েছে।“

আইনজীবী, পুলিশ কর্মকর্তা ও অন্যান্য বিশ্লেষকরা একমত যে, কাশ্মীরে সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা রক্ষার সমস্যার সমাধান না হলে দেশজুড়ে এর খারাপ প্রভাব পড়বে।

ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলছিলেন, "আপনারা তো দেখতে পাচ্ছেন যে ভারতের কোথাও সেনাবাহিনী ট্রেনে ছাত্রদের মারছে, কোথাও বাজারে মারামারি করছে আবার কখনও নিজের বাহিনীর অফিসারদের সঙ্গেই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। তাই সুষ্ঠু তদন্তের পর দোষীদের শাস্তি দেওয়া আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ভারত-শাসিত কাশ্মীরে থানায় ঢুকে সেনা সদস্যরা পুলিশকে মারধর করেছে কেন? - BBC News বাংলা (4)

ছবির উৎস, Getty Images

বিবিসি বাংলায় অন্যান্য খবর
  • গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরায়েলের প্রস্তাব খোলাসা করলেন বাইডেন

  • বেনজীর গত এক দশকে যেভাবে আলোচনা, সমালোচনা ও বিতর্কের কেন্দ্রে ছিলেন

  • কোলন ক্যান্সারসহ আরও যেসব রোগ মুখে থাকা ব্যাকটেরিয়ার সাথে সম্পর্কিত

'এসব ঘটনা পুলিশের মনোবল ভেঙে দেয়'

সিনিয়র সাংবাদিক ও বিশ্লেষক আহমেদ আলি ফায়াজের মতে, সেনাবাহিনী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ কাশ্মীরিদের কাছে যত বড় সমস্যা, তার থেকেও অনেক বড় সমস্যা ভারত সরকারের জন্য।

তিনি বলেন, "জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশই দেশের একমাত্র বাহিনী যারা কয়েক দশক ধরে চরমপন্থিদের বিরুদ্ধে সামনের সারিতে থেকে লড়াই করছে। যদি কোনও জায়গায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ হয় এবং বিষয়টি প্রমাণিত হয়, তাহলে দোষীদের শাস্তি হওয়াই উচিত কারণ এই ধরণের ঘটনা জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের মনোবল কমিয়ে দেবে।“

কুপওয়ারার সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কে আহমেদ আলি ফায়াজ বলছিলেন যে এরকম একটা ঘটনায় ভারত সরকারের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত।

তার কথায়, "দেখুন, আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত থানা এবং সেখানকার ওসিও নিরাপদ নন। আমরা কীভাবে বলতে পারি যে সাধারণ মানুষ সুরক্ষিত থাকবেন এবং তাদের কোনও সমস্যা হবে না? এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ থানায় যাবে কী আশা নিয়ে?”

ভারত-শাসিত কাশ্মীরে থানায় ঢুকে সেনা সদস্যরা পুলিশকে মারধর করেছে কেন? - BBC News বাংলা (2024)
Top Articles
Latest Posts
Article information

Author: Tish Haag

Last Updated:

Views: 5887

Rating: 4.7 / 5 (67 voted)

Reviews: 90% of readers found this page helpful

Author information

Name: Tish Haag

Birthday: 1999-11-18

Address: 30256 Tara Expressway, Kutchburgh, VT 92892-0078

Phone: +4215847628708

Job: Internal Consulting Engineer

Hobby: Roller skating, Roller skating, Kayaking, Flying, Graffiti, Ghost hunting, scrapbook

Introduction: My name is Tish Haag, I am a excited, delightful, curious, beautiful, agreeable, enchanting, fancy person who loves writing and wants to share my knowledge and understanding with you.